ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

ঈদ মার্কেটিংয়ে জেলার জনস্রোত ঈদগাঁওমুখি-স্থায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি

আনোয়ার হোছাইন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::
করোনার মহামারি থেকে সুরক্ষার জন্য সরকার ও জেলা প্রশাসন লকডাউন জারি করে।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,অত্র এলাকার জনগণ ও দোকানদারেরা তা কখনো মান্য করেনি।বিশেষ করে রোজার ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাজারে জনসমাগম চরম আকার ধারণ করেছে।অসাধু দোকানদাররাও এ সুযোগে গলাকাটা মূল্য আদায় করে নিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার ভোররাত তথা ফজরের আযানের পর থেকে এলাকার লোকজন রিক্সা, টমটম, সিএনজি ও মাহিন্দ্র যোগে ঈদগাঁও বাজারমুখিত হতে শুরু করে।সকাল ১০ টার দিকে ঈদগাঁও বাস স্টেশন এবং বাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। ঈদগাঁও ডিসি সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।অধিকাংশ মহিলা ও শিশু শ্রেণির।বাজারে জনসমাগম ঠেকাতে মহাসড়কের বাস স্টেশনস্থ ব্রীজের উত্তর পাশে পুলিশ অবস্থান করলেও তাদের গাড়ী প্রবেশ কিংবা জনসমাগম ঠেকাতে কোম ভুমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।বেশ কিছু দোকানদারের সাথে আলাপ হলে তারা জানায়,ঈদ উপলক্ষে করোনার কারণে তারা নতুন কোন পণ্য আনতে পারেননি। তবে চাহিদা প্রচুর। কারণ জেলার অন্য বাজার এবং স্টেশনের মার্কেট গুলো করোনায় লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় এসমস্ত এলাকার ক্রেতারাও ঈদগাঁও বাজারে চলে আসছে।করোনায় লকডাউন এবং দোকানের উপর সরকারি যে বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে, তা মানা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তারা বলেন,প্রথমদিকে দোকানদারেরা কিছুটা মানলেও পরবর্তীতে দোকানের জমিদার বা মালিকরাতো ঠিকই তাদের থেকে ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। গড়িমসি করলে দোকান নিয়ে ফেলার হুমকি দেয়।এমতবস্থায় আয় করতে না পারলে তারা নিজেরা কিভাবে সংসার চালাবেন এবং ভাড়া দেবেন কোথা থেকে?এ অবস্থায় প্রথম দিকে কিছু দোকানদার দোকান খুলতে শুরু করে। তাদের দেখা দেখি পুরো বাজার ও স্টেশনের মার্কেটের সব দোকান খুলে বসে দোকানদাররা।এদিকে ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দোকান পাট খুলার সংবাদ পেয়ে বৃহত্তর ঈদগাঁওসহ জেলার ক্রেতারা ঈদ মার্কেটিং সারতে সেহরি শেষ করেই বানের পানির মতো ঈদগাঁওয়ের দিকে ছুটে আসছে। আবার ক্রেতাদের মধ্যে সিংহভাগই নারী আর শিশু।এসব মার্কেটে নেই কোন সামাজিক কিংবা শরীরীক দূরত্ব, শতকরা ৭০ ভাগের মুখে নেই মাস্ক। মার্কেট গুলোতে নেই সেনিটাইজারের বেবস্থা। মার্কেটিং করতে আসা এরুপ কয়েকজন মহিলা ও পুরুষের সাথে আলাপ হলে তারা জানায়, মার্কেট খুলেছে সংবাদ পেয়ে সন্তানদের পীড়াপীড়িতে তাদের বাধ্য হয়ে বাজারে আসতে হচ্ছে। তবে দোকানদারেরা এ সুযোগে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে বলে জানান।আবার এসব যান চালকের কয়েকজনের সাথে কথা হলে জানায়,গাড়ি চালিয়ে আয় করতে না পারলে তাদের সংসার চলেনা।তাই নিশ্চিত করোনা আতংকের মধ্যেও পেটের দায়ে তাদের গাড়ী চালাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ আবদুর রহিম আমানির কাছে,ঈদগাঁও বাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার মধ্যে ঈদগাঁও এলাকার জনগণ কোন ভাবেই করোনা সুরক্ষায় সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তার কোন তোয়াক্কা করছেনা।বিশেষ করে সিংহভাগ মানুষ মাস্ক বেবহার করছেনা এবং সামাজিক দূরত্বতো একদমই নেই তাদের মধ্যে। পাশাপাশি বাজারের মার্কেট গুলো যেভাবে খুলেছে বলে জেনেছেন, তাতে মনে হচ্ছে অতি শীঘ্রই ঈদগাঁওতে করোনা মহামারি আকার ধারণের শংকা রয়েছে।এক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর হস্তে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা ছাড়া এ জনগণ সচেতন হয়ে উঠার কোন লক্ষনই চোখে পড়ছেনা।এমনকি তারাও ঈদগাঁও এলাকার সাধারণ রোগী দেখতে গিয়ে আতংকবোধ করছেন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃখায়ের আহমদ জানান,যেভাবে জেলার সব জায়গা থেকে ঈদগাঁওতে লোকজন মার্কেটিং করতে আসছে,তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই ঈদগাঁও করোনার হটস্পট হয়ে উঠতে পারে।

এ বিষয়ে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আসাদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে,তিনি বলেন সদরের সিংহভাগ এলাকা হচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁও। এখানকার লাখো জনগোষ্ঠীকে করোনা থেকে সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।বিশাল ঈদগাঁও বাজারসহ এলাকায় ছোটবড় আরো অর্ধ ডজন বাজার রয়েছে।তাই এ জনসাধারণকে কোন ভাবেই পুলিশ একার পক্ষে ঘরমুখো কর সম্ভব হচ্ছে না।কি উপায়ে তা সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন,এলাকাটি উপজেলা সদর থেকে দূরত্বে এবং বিশাল জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় দেশে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অত্র এলাকার জন্য একজন জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক মাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেই কেবল জনগণকে ঘরমুখো করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন।নয়ত পুলিশ সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গকারী কাউকে আটক করলে উপস্থিত মোবাইল কোর্ট না থাকায় তাদের আবার বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিতে হয়।ছাড়া পেয়ে আবার একই কাজ শুরু করে।
ঈদগাঁও চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলমের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহত্তর ঈদগাঁও’র জনগণকে করোনা থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথম ঈদগাঁও’র বেবসায়ীদের পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দোকান পাট সরকারি নির্দেশনা মতো বন্ধ রাখতে হবে এবং জনগণকে ঘরমুখি হতে হবে।যারা এ নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বৃহত্তর ঈদগাঁও কেন্দ্রীক উপজেলা প্রশাসন থেকে একজন মাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবি করেন। একজন মাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক ঈদগাঁওতে অবস্থান করলে তবেই পুলিশের পক্ষে এ বিশাল এলাকার জনগণকে ঘরমুখো করা সম্ভব বলে দাবি করেম।যদি দ্রুত এ পদক্ষেপ নেয়া না হয় তবে অল্প সময়ের মধ্যে বৃহত্তর ঈদগাঁও জুড়ে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।কারণ ঈদগাঁও’র সব ধরণের মার্কেট খুলা রয়েছে সংবাদ পেয়ে পার্শ্ববর্তী করোনা প্রবণ উপজেলা চকরিয়া,মহেশখালী,রামুসহ জেলার অন্য উপজেলা থেকে ক্রেতারা অতিরিক্ত ভাড়ায় সেহেরীরর পর থেকেই ঈদগাঁওয়ের দিকে ছুটে আসছে।
এলাকার শিক্ষাবিদ,সাংবাদিক ও সচেতন সমাজ এখনো পর্যন্ত করোনামুক্ত ঈদগাঁও’র লাখো জনগোষ্ঠীকে করোনারমত মরণঘাতি মহামারি থেকে রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এদিকে এ রিপোর্ট লিখাকালীন ঈদগাঁওতেব বসবাসরত এমন এক যুবক এ-ই প্রথম করোনা রোগি হিসেবে শনাক্ত হয়েছ আজ।তিনি হচ্ছেন ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার জাগির পাড়ার বাসিন্দা মৃত ছৈয়দ আলমের ছেলে মোঃ আলমগীর।সন্ধ্যায় রোগটির বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী কিছু ঘর লকডাউন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রর এসআই মহি উদ্দিন।

পাঠকের মতামত: